২০২৫ সালের World Happiness Report বা বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় কুয়েত ৩০তম সুখী দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, গ্যালাপ এবং UN Sustainable Development Solutions Network-এর যৌথভাবে তৈরি করা এই রিপোর্টে বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশের মানুষের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টির মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে। এতে দেশগুলোর মাথাপিছু আয়, দানশীলতা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, স্বাধীনতা ও দুর্নীতির হার মূল্যায়ন করা হয়।
কুয়েত: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
কুয়েত মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি ধনী রাষ্ট্র। এর রাজধানী কুয়েত সিটি এবং দেশটির মুদ্রা হলো কুয়েতি দিনার (KD), যা বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান মুদ্রাগুলোর একটি। জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লাখের মতো, যার মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই প্রবাসী।কুয়েতে বিশ্বের তেল মজুদের প্রায় ৭% রয়েছে। কুয়েত একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র যেখানে নির্বাচিত সংসদ রয়েছে। দেশটি ১৯৬১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে এবং বর্তমানে এটি অন্যতম নিরাপদ, উন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল উপসাগরীয় দেশ হিসেবে পরিচিত।
কুয়েতে অ্যালকোহল বিক্রি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। বিবাহিত না হলে বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে হোটেলে থাকা বেআইনি। এ নিয়ম পর্যটক, নাগরিক এবং বাসিন্দা সকলের জন্য কঠোরভাবে প্রযোজ্য।
বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় কুয়েত
২০২৫ সালের হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, কুয়েতের অবস্থান বিশ্বের ৩০তম সুখী দেশ হিসেবে। গালফ অঞ্চলে এটি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে, যেখানে প্রথম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (২১তম), আর কুয়েতের ঠিক পরে সৌদি আরব রয়েছে ৩২তম অবস্থানে।
Cantril Ladder Score বা জীবন নিয়ে সন্তুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠিতে কুয়েত ভালো স্কোর করেছে। এছাড়া গ্লোবাল ডোনেশন ইনডেক্সে কুয়েত রয়েছে ৩৩তম, ভলান্টিয়ারিং-এ ৪৬তম, এবং অপরিচিতদের সহায়তায় ২৭তম স্থানে।
কুয়েত কেন সুখী দেশের তালিকায় উপরে
১. সামাজিক শৃঙ্খলা
কুয়েতি সমাজে পরিবার, প্রতিবেশী এবং কমিউনিটির প্রতি গভীর সংযোগ রয়েছে। মানুষ একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং পারস্পরিক সহায়তায় বিশ্বাসী।
২. দানশীলতা ও ভলান্টিয়ারিং:
কুয়েতিরা দান করতে এবং সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নিতে আগ্রহী। স্থানীয় চ্যারিটি সংস্থা, মসজিদ এবং যুব সংগঠনগুলো নিয়মিত বিভিন্ন সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা করে।
৩. অপরিচিতদের প্রতি বিশ্বাস
হ্যাপিনেস রিপোর্টে বলা হয়েছে, অপরিচিত ব্যক্তিদের উপর বিশ্বাস মানুষের সুখের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। কুয়েতে দেখা যায়, আপনি যদি বাসে, দোকানে বা রাস্তায় বিপদে পড়েন, বেশিরভাগ সময়েই কেউ না কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে।
নারী ভ্রমণকারীদের জন্য নিরাপদ:
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্লগার এবং একক নারী পর্যটকদের মতে, কুয়েতে তারা কখনোই অনিরাপদ বোধ করেননি। কুয়েতি সমাজ সাধারণত ভদ্র, সম্মানজনক এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল। নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি তুলনামূলকভাবে স্বাধীন এবং অনেকটাই সহনশীল। নারীরা খুব সহজেই বাস বা ট্যাক্সি ব্যবহার করে এক শহর থেকে আরেক শহরে যাতায়াত করতে পারেন। Google Maps-এর মাধ্যমে বাসের রুট জানা যায়, এবং প্রতি ৫-১০ মিনিট পরপর বাস পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে নারী যাত্রীরা নির্ধারিত ভাড়ায় নিরাপদ ট্যাক্সি সার্ভিস পেয়ে থাকেন।
কুয়েতি পুলিশ ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ:
কুয়েতি পুলিশ প্রশাসন কঠোর ও সুশৃঙ্খল। দেশে সহিংসতা ও অপরাধের হার অত্যন্ত কম। যেকোনো ধরনের হয়রানি, চুরি বা বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। এ কারণেই নাগরিক ও প্রবাসীরা এখানে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলাফেরা করতে পারে।
প্রশ্ন: কুয়েত কি ভ্রমণ বা বসবাসের জন্য নিরাপদ?
উত্তর: হ্যাঁ, কুয়েত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম নিরাপদ দেশ। পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত সক্রিয় এবং সহিংসতা বা অপরাধের হার খুবই কম।
প্রশ্ন: কুয়েতে একক নারী ভ্রমণ নিরাপদ কিনা?
উত্তর: একক নারী পর্যটকরা কুয়েতে ভ্রমণ করে সাধারণত নিরাপদ বোধ করেন। পাবলিক পরিবহন ও রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করে সহজেই চলাচল করা যায়।
প্রশ্ন: কুয়েতে অ্যালকোহল কেনা বা পান করা যায় কি?
উত্তর: না, কুয়েতে অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। বিক্রি, বহন বা পান—সবই বেআইনি।
প্রশ্ন: বিদেশি অবিবাহিত যুগল হোটেলে থাকতে পারে?
উত্তর: কুয়েতের আইনে অবিবাহিত কোনো যুগলের একসাথে হোটেল রুমে থাকা বেআইনি, তা স্থানীয় হোক বা বিদেশি।
প্রশ্ন: কুয়েতে কোন ভাষা বলা হয়?
উত্তর: সরকারি ভাষা আরবি হলেও, ইংরেজি খুব প্রচলিত এবং সরকারি অফিস, হাসপাতাল ও দোকানে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন: কুয়েতে কতজন বাংলাদেশি প্রবাসীরা বসবাস করেন?
উত্তর: হ্যাঁ, প্রায় ৩ লাখের বেশি বাংলাদেশি কুয়েতে কাজ করেন এবং বেশিরভাগই স্বাচ্ছন্দ্যেই বসবাস করেন।